ফাস্ট ফুডের ক্ষতিকর দিকসমুহ ও করণীয়
 July 2, 2018
July 2, 2018
                                        
                                            
                                             45363 Views
45363 Views
                                        
                                        
                                            
                                    বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সবাইকে খাবার গ্রহণ করতে হয়। দিনদিন সহজেই মিলে যাওয়া বিভিন্ন জাঙ্ক বা ফাস্ট ফুড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এগুলোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আসুন জেনে নিই।
আমরা যদি সামান্য একটু পেছনে ফিরে তাকাই তবে দেখতে পাব যে উনবিংশ শতাব্দীর আগেও আমাদের প্রায় সব খাবার সামগ্রীই ঘরের ভিতরেই তৈরি করা হতো। এসবের কাঁচামাল নিজ হাতে চাষ ও পরবর্তীতে সেগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়ির মধ্যেই সম্পন্য করা হতো। ফলে তাঁর মধ্যে প্রাকৃতিক সকল উপাদান সংরক্ষিত থাকত। তবে ইদানিং রাস্তার পাশের জাঙ্ক ফুডের সহজলভ্যতা দিনদিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে মানুষ স্থূলকায় হয়ে নানা অসুখ বিসুখের শিকার হচ্ছে। তাই অন্তত নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে হলেও এসব ক্ষতিকর দিক সন্মন্ধে জেনে এসব খাবার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা দরকার। আজকে আমরা জানব বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকসমুহ সম্পর্কে।
ফাস্ট ফুড কী?
ফাস্ট ফুড হলো বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ সমন্বয়ে তৈরি খাবার খেয়ে শরীরের প্রচণ্ড ক্ষতিসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এসব খাবার শরীরের জন্য সর্বদা ক্ষতিকারক। এসব খাবারে চর্বি, লবন, কার্বনেট এসব অতিরিক্ত মাত্রায় থাকে। এইসব ক্ষতিকারক উপাদানের কারণে শরীর নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এসব খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা দরকার।
ফাস্ট ফুডে ক্ষতিকর কী কী থাকে?
ফাস্ট ফুডে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান থাকে যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো-
১। গোপন বা লুক্কায়িত চিনি:
অনেক জাঙ্ক বা ফাস্ট ফুডে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত চিনি ব্যবহার করা সত্ত্বেও এসব উপাদান সাধারণত সুগার বা চিনি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় না। কিন্তু এসব উপাদান খাবার বিপাকের সময় চিনিতে রূপান্তরিত হয়। এই উপাদানগুলি যেমন কর্ন সিরাপ, ফ্রুক্টোজ বা সুক্রালোজ ইত্যাদি খাবারের ক্যালরির পরিমাণকে বাড়িয়ে দিয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে।
২। কৃত্রিম বা বিকল্প চিনি:
অনেক ফাস্ট ফুডে কৃত্রিম চিনির ব্যবহার হওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দেহে চিনির পরিমাণ বেশী বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে চিনির বিকল্প হিসাবে সুক্রালোজ, এসিসালফেইম পটাশিয়াম এবং স্যাকারিন ব্যবহার করা হয় যেগুলোতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকলেও এগুলো বিপাক ক্রিয়ায় দারুণভাবে বিপত্তি সৃষ্টি করে।
৩। হাইড্রোজেনেট তেল:
ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো খাবার তৈরিতে ঘন ঘন হাইড্রোজেনযুক্ত তেল ব্যবহার করে। এই হাইড্রোজেনেটেড তেল শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করে। বাণিজ্যিকভাবে প্যাকেজকৃত খাবার বিশেষ করে চিপস এবং ক্র্যাকারগুলি হাইড্রোজেনেটেড তেলের তৈরি। তাই এসব খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের এসব বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরী।
ফাস্ট ফুডের ক্ষতিকর দিকসমুহঃ
১।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াঃ
ফাস্ট ফুড বা জাঙ্কফুড খেলে কোননা কোন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। এসব খাবার যেহেতু রাস্তার ধারে বেশী বিক্রি হয় এবং বহসময় ধরে খাবার উপযোগী করে রাখার চেষ্টা করা হয়, তাই এতে জীবাণুর বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এসব মিশ্রিত জীবাণু শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া এসব খাবার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নষ্ট করে দেয়।এজন্য রাস্তার ধারের বিভিন্ন জাঙ্কফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
২।ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধিঃ
ফাস্ট ফুড মুলত বাসি জাতীয় খাবার। এসব খেলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ত্বকের সতেজতা কমে যাওয়া। চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে মুখ শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে পড়ে । এছাড়া অন্যান্য ত্বকের সমস্যার মধ্যে ব্রণ,এলার্জি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
৩। দেহের ওজন বেড়ে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত ৪০ বছরে স্থূলকায় মানুষের হার প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের মতো অনেক সমস্যা। প্রতিনিয়ত জাঙ্কফুড গ্রহণে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত পরিমাণে জাঙ্ক ফুড গ্রহণের ফলে মানুষের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলকায় হবার আশংকা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফাস্ট ফুড খাওয়ার জন্যই সারাবিশ্বে মোটা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এসব খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রতিনিয়ত চিনির মাত্রা ওঠানামা করার কারণে অগ্নাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং ধীরে ধীরে ইনসুলিনের নিঃসরণের পরিমাণও হ্রাস পেতে থাকে। ফলাফল হিসাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হৃদরোগ, বেদনাদায়ক স্নায়ুজনিত ক্ষতি, কিডনির ক্ষতি, আলঝেইমারের ঝুঁকি বেড়ে যায় । Institute for Health Matrix and Evaluation- এর এক রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে শতকরা প্রায় ১৭ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ শতাংশ স্থূলকায়। ফাস্ট ফুডে পরিমানের অধিক কার্বোহাইড্রেড বা শর্করা এবং চর্বি থাকায় তা শরীরে নানান সমস্যা তৈরি করে, বিশেষ করে মেদ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত চর্বি দেহে জমতে থাকে। ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীর তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে।
প্রতিনিয়ত ছুটে চলা আজকের জনগণের কাছে খাবার তৈরির সময়টুকুও হয়ে উঠে না অনেক সময়। তাছাড়া জাঙ্ক ফুড কোম্পানিরা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করেই যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো রেস্টুরেন্টে দিয়ে চলেছে একটি কিনলে একটি ফ্রি জাতীয় বিজ্ঞাপন। ফেসবুকের প্রমোশনাল পোস্টে খাবারে ডিসকাউন্ট জাতীয় বিজ্ঞাপন। ফলে এসব খাবার থেকে বেঁচে থাকতে চাইলেও পারা যাচ্ছেনা আমরা বেশী ঝুঁকে পড়ছি এই ফাস্ট ফুডের দিকে। জাঙ্ক ফুড আমাদের জন্য ক্ষতিকর, এ বিষয়ে কারও কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু আমাদের নিজের চিন্তা করে হলেও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে আগ্রহী হওয়া উচিত। যতই ডায়েটিং বা ব্যায়াম করা হোক না কেন, এসব খাবার খেয়ে ওজন কমাতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। তাই আসুন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটু পাল্টাই। যথাসম্ভব ঘরের তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি।



 
                                