শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি
 January 15, 2019
January 15, 2019
                                        
                                            
                                             10959 Views
10959 Views
                                        
                                        
                                            
                                     
                                        মায়ের বুকের দুধ যথেষ্ট পাচ্ছে না মনে করে অনেকে তাদের সন্তানকে ফিডারে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো শুরু করেন। শুধুমাত্র এ কারণে শিশুটির অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা হতে পারে। চলুন শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে নিই।
মায়ের বুকের দুধ যথেষ্ট পরিমাণে পাচ্ছে না, এই ভেবে অনেকে প্রথমেই শিশুকে ফিডারে খাওয়ানো শুরু করেন। আবার অনেকে ব্যাস্ততার জন্য শিশুকে বুকের দুধ না খাইয়ে বোতলে বা ফিডারে বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ খাইয়ে থাকেন। অথচ তারা জানেন না এর দ্বারা অজান্তেই তাদের আদরের শিশুটির কত বড় ক্ষতি করছেন। বুকের দুধ না খাইয়ে প্লাস্টিকের বোতলে ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে ঘটতে পারে শিশুর নানা বিপদ । শুধুমাত্র এ কারণে শিশুটির দেহের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি সহ নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, একজিমা, কানপাকা, ডায়াবেটিস সহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতা হতে পারে। এছাড়া ক্যানসারসহ নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সহ হঠাৎ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
বাচ্চাকে ফিডারে খাওয়ানোর স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ
১। বাচ্চার বুকের দুধ খাওয়ার অনিহা
প্রথম থেকেই ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে তা শিশুর ছোট পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ জমা থাকায় পরবর্তীতে সে আর কষ্ট করে বুকের দুধ পান করতে চায় না। এছাড়া ফিডারের নিপলের তুলনায় মায়ের নিপল খানিকটা শক্ত বলে সে আর পরিশ্রম করে বুকের দুধ পান করতে চায়না। এতে যে শিশু শুধু বিভ্রান্তিতে পড়ে তাই নয়, মায়ের বুকের দুধের প্রবাহও স্তিমিত হয়ে আসে। এতে সে মায়ের দুধের সব উপকার থেকে বঞ্চিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ পান করেনি, এমন শিশুর মৃত্যুহার অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
২। চোকিং সমস্যা
ফিডারের নিপলের সাহায্যে শিশুকে দুধ খাওয়ালে তাঁর ছোট মুখগহ্বরে ফর্মুলা দুধের ধারা কখনো সরু আবার কখনো জোরে বের হয়ে আসে। আর ছোট এই শিশুটি তাল মিলিয়ে গিলতে পারে না, ফলে হঠাৎ গলায় আটকে গিয়ে শ্বাসনালি বা ফুসফুসে ঢুকে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৩। হঠাৎ শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়া
অনেকে ঘুমন্ত অবস্থায় ফিদার বা দুধের বোতল শিশুর মুখে ধরিয়ে দেয়। এতে অনেক সময় দুধের ধারা মুখের ভেতর জমা হয়ে তাঁর শ্বাসরোধ করে ফেলতে পারে।
৪। দাঁতের গর্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া
বাইরের ফর্মুলা দুধ ছোট বাচ্চার নতুন গজানো দাঁতে গর্ত জনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের দাঁতের ক্ষয়ের অন্যতম কারণ সারা ক্ষণ বোতলের দুধে অভ্যস্ত করা। সাধারণত, যে সব শিশুর সবে দাঁত উঠছে, তাদেরও দিনের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই মুখে বোতল দিয়ে রাখেন মায়েরা। দুধ জাতীয় দ্রব্যের মিষ্টতা ও দুধ শুষে খাওয়ার জন্য রবারের ঢাকা দীর্ঘ ক্ষণ শিশুর মুখের মধ্যে থাকায় এই সমস্যা হয়।
৫। শিশুদের কানপাকা সমস্যা
শিশুদের কানপাকা সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ানো। যদি ঘুমন্ত শিশুর মুখের ভেতর জমে থাকা ফর্মুলা দুধ সংযোগনালি বেয়ে কানে প্রবেশ করে তাহলে সংক্রমণ ঘটে কান পাকার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৬। শিশুর ওজন বৃদ্ধি
ফর্মুলা দুধের ঘনত্ব নির্ণয়, নানা ধরনের ব্র্যান্ডের ব্যবহার, খাওয়ানোর সময় নির্বাচন এক জটিল বিষয়। তাই শিশুর প্রয়োজনের বেশী অর্থাৎ ভার ফিডিং করানো হলে আপনার শিশুটি মেদবহুল হয়ে তাঁর ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
৭। শিশুর পেট ব্যাথা ও ডায়রিয়া
ফিডার বা বোতলে খাওয়ানোর সময় নিপলের ছিদ্রপথে শিশুর পেটে বাতাস ঢোকে, তাতে শিশুর পেটব্যথা উপসর্গ তৈরি হয়। শিশুর অন্ত্রে নানা রকম জীবাণুর প্রবেশ ঘটে, ফলে সে দুধের অ্যালার্জি-জনিত অসুখ ছাড়াও ডায়রিয়া রোগে ভোগতে পারে। এছাড়া সঙ্গে দেখা দিতে পারে কোষ্ঠবদ্ধতা।
আজ আমরা জানলাম বাচ্চাকে ফিডারে করে দুধ খাওয়ালে কী কী ধরণের সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় মা চাকরিজীবি হবার কারণে অথবা মায়ের স্বাস্থ্যগত কারণে বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণ বুকের দুধ না পেলে ডাক্তাররা কৌটার দুধ দেবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে কখনই নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে বাচ্চাকে ফিডার খাওয়ানো শুরু করা উচিত নয়। মনে রাখবেন, মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। আর একান্তই যদি ফিডারের আশ্রয় নিতে হয় তা যেন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।



 
                                