হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ কেন হয়? কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
July 24, 2020
5402 Views
হৃদরোগ ও এর প্রতিরোধ নিয়ে ডাক্তারভাই ব্লগে লিখেছেন ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. নুর মোহাম্মদ শেখ। আপনাদের জন্য লেখাটি তুলে ধরা হলো।
আজকাল মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি, অনেকের মধ্যে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধেরও অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ-কারণে এবং রাত-জাগা এবং মানসিক চাপের ফলে হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আজকের আমরা হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ কেন হয় এবং এর প্রতিরোধক উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ কেন হয়? এই ক্ষেত্রে তিনটি কারণ তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা:
১. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও খাদ্যগ্রহণে অনিয়ম
মানসিক চাপ বেশি হলে, মস্তিষ্কের স্নায়বিক-ব্যবস্থা সবসময় চাপের মধ্যে থাকে। মস্তিষ্ক তথন রিলাক্স করার সময় পায় না। আর এর নেতিাবাচক প্রভাব পড়ে হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের ওপর। আরেকটি কথা, খাদ্যগ্রহণে সচেতন থাকা দরকার। খাদ্যগ্রহণে অনিয়ম ভাল নয়। হঠাৎ একবারে বেশি পরিমানে খাওয়া বা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। এই বদভ্যাস থাকলে আপনি হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং, আমাদের উচিত অতিরিক্ত মানসিক চাপ না-নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
২. ধূমপান ও মদ্যপান
এক জরিপ থেকে দেখা যায়, যারা দীর্ঘকাল ধরে নিয়মিত ধূমপান ও মদ্যপান করে আসছেন, তাদের হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। কারণ, ওয়াইনের মধ্যে রয়েছে এলকোহল এবং সিগারেটের মধ্যে রয়েছে নিকোটিন। এই দুটি উপাদান মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ-ধরনের মানুষ সহজেই মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং, সুস্থতার জন্য ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
৩. পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভাব
যাদের শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেশি, তাদের হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সুতরাং, পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করা জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা হল। এখন কীভাবে এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করব। এই ক্ষেত্রেও ৩টি পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা:
১. শাক-সবজি বেশি খাওয়া
খাবার তালিকায় অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার যত কম, শরীরের জন্য তা ততই ভাল। সুতরাং, নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় শাক-সবজি বেশি থাকা দরকার। আরেকটি কথা, লবণজাতীয় খাবার ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত।
২. শরীরচর্চা
শরীরচর্চা শুধু হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ এড়ানোর জন্য নয়, সুন্দর স্বাস্থ্য ও ফিগারের জন্যও সহায়ক। শত ব্যস্ততার মধ্যেও শরীরচর্চার জন্য সময় বের করতে হবে। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে: 'দীর্ঘজীবন চাইলে বেশি বেশি পায়চারি করুন'। এখানে পায়চারি বা হাঁটা বলতে শরীরচর্চাকে বোঝানো হয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শরীর সুন্দর ও সুঠাম রাখে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চা হিসেবে পায়চারি করা, আস্তে দৌড়ানো, থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ, শরীরগঠনমূলক ব্যায়াম ও ইউগা ইত্যাদি ভালো। নিয়মিত শরীরচর্চা আসলে শুধু যে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়ক তা-ই নয়, সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত জীবনের জন্যও এটি জরুরি।
প্রসঙ্গক্রমে একটি কথা বলি। মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ বার নামাজ পড়েন। নামাজের সময় একজন মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করে। অনেকে নামাজকে চমত্কার শরীরচর্চা বলে থাকেন। অবশ্য মুসলমানরা নামাজ পড়েন আল্লাহর নির্দেশে, আত্মিক উন্নতির জন্য; শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু বাস্তবে কিন্তু শরীরচর্চার উপকারিতাটুকুও একজন মুসলিম নামাজের মাধ্যমে পেয়ে যান।
৩. মানসিক চাপ কমিয়ে আনা
বাস্তব জীবনে অনেক সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি ব্যাপার ঘটে প্রতিনিয়ত। অসন্তুষ্টির ব্যাপারগুলো মানসিক চাপ বাড়ায়। কিন্তু আমাদের উচিত মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল শেখা। যেমন, ভাল বন্ধুর সাথে সিনেমা দেখা, কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে পার্কে হাঁটাহাটি করা, প্রভৃতি। এটি আমাদের সুস্থতার জন্যও সহায়ক।


