চোখে যদি খোঁচা বা আঘাত লাগে কী করবেন
January 14, 2022
12638 Views
চোখ যে ভীষণ অরক্ষিত একটি অঙ্গ, তা একে সুরক্ষিত রাখার নানা আয়োজন দেখলেও বোঝা যায়। অক্ষিগোলককে নিরাপদ রাখার জন্য আছে চক্ষুকোটর, ধুলাবালুসহ বাইরের কোনো আঘাত থেকে আগলে রাখার জন্য চোখের পাতা।
তারপরও একটু অসতর্কতা থেকে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বিপত্তি। ধুলাবালু তো পড়তেই পারে, কাগজের কোনা, টেবিলের কোনা, নখের খোঁচা লাগার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সামান্য একটু খোঁচা বা কণা থেকেও চোখের বড় ধরনের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে করণীয় সম্পর্কে অবহিত থাকলে অনেক সময় নিরাপদ থাকা সম্ভব।
যেকোনো বয়সের যে কেউ যেকোনো সময় আঘাত পেতে পারে। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত শিশু-কিশোর আর কর্মজীবীদের মধ্যেই বেশি ঘটতে দেখা যায়। কারখানায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা একধরনের আঘাত, কৃষিকাজে নিয়োজিত যাঁরা, তাঁরা আরেক ধরনের আঘাতের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। পরিবহন দুর্ঘটনাজনিত কারণেও একটি বড় অংশ চোখে আঘাত পেয়ে থাকে।
কৃষিজাত বস্তুর আঘাত
কৃষিজাত বস্তুর মধ্যে ধান বা শস্যকণা, গাছের ডালপালা বা যন্ত্র থেকে ছুটে আসা ধানের কণা, কাঠের টুকরা ইত্যাদি থেকে আঘাত পেতে প্রায়ই দেখা যায়। মাড়াইয়ের মৌসুমে ধানের আঘাত পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। আবার ঝোপঝাড় বা মাচায় কাজ করার সময় চোখে খোঁচা লাগাও একটি সাধারণ ঘটনা। এসব আঘাত প্রাথমিক অবস্থায় খুব বেশি সমস্যা করে না, ফলে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দিতে চাই না। কিন্তু অনেক সময় এসব আঘাতই ধীরে ধীরে কর্নিয়াকে সংক্রমিত করে অন্ধত্বের সৃষ্টি করে।
কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আঘাত
ছোট ছোট কারখানা বা গ্রিন্ডিং বা ওয়েল্ডিং মেশিনে যাঁরা কাজ করেন, অসাবধানতায় তাঁদের চোখেও আঘাত লাগতে পারে। সাধারণত মেটাল বা লোহার কণা ছিটকে এসে চোখে পড়ে। চোখে বিশেষ করে কর্নিয়ায় এই মেটাল পার্টিকেলগুলো বিঁধে থাকতে পারে। আবার নির্মাণসামগ্রী নিয়ে কাজ করার সময়ও এরূপ আঘাতের শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে ইটের টুকরা, মিন্টের কণা বা বালু ইত্যাদি চোখে পড়তে দেখা যায়।
খেলতে গিয়ে আঘাত
সাধারণত ধারালো বস্তু যেমন কাঁচি-ছুরি, খেলনা, পেনসিল, কম্পাস ইত্যাদি দিয়ে কাজ করার সময় অসাবধানতায় আঘাত লাগতে পারে। ব্যাডমিন্টন খেলার সময় কর্কের আঘাত একটি নিয়মিত ঘটনা। শিশুরা খেলার সময় প্রায়ই অন্যের নখের আঁচড় বা আঘাত পেতে পারে।
উপসর্গ
- হালকা বা তীব্র ব্যথা। নির্ভর করে আঘাতের তীব্রতা এবং কর্নিয়ায় লেগেছে কি না, তার ওপর। কর্নিয়া সম্পৃক্ত হলে হালকা আঘাত বা ছোট কণাতেই প্রচুর ব্যথা হয়।
- চোখ লাল হয়ে যায়।
- চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে।
- ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়।
- চোখে রক্ত জমাট বাঁধা।
- দৃষ্টি ঝাপসা বোধ।
তৎক্ষণাৎ করণীয়
- সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার পানির ধারা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে। বিশেষ করে চোখে যদি ধুলাবালুর মতো কিছু পড়ে।
- হালকা করে পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে পোকা বা কণা জাতীয় কিছু নজরে পড়লে বের করার চেষ্টা করতে হবে। তবে যদি মনে হয় কোনো কিছু বিঁধে আছে, তবে স্পর্শ না করাই ভালো।
- কেবল একটু আঁচড় লেগেছে, তেমন কিছু চোখে পড়েনি, এমনটি মনে হলে যেকোনো একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কখন চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে
- দৃষ্টি ঝাপসা লাগলে।
- প্রচণ্ড ব্যথা হলে।
- চোখ অনেক ফুলে গেলে বা চোখ খুলতে অসুবিধা বোধ করলে।
- কোনো ক্ষত নজরে এলে বা রক্তক্ষরণ হলে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- কারখানায় কাজ করার সময় যথাযথ প্রতিরোধ গিয়ার যেমন চশমা, হেলমেট বা সানগ্লাস ইত্যাদি যেখানে যেটি প্রযোজ্য, অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
- খালি চোখে ওয়েল্ডিং মেশিনে কখনোই কাজ করা যাবে না।
- কৃষিকাজ বিশেষ করে ধানমাড়াইয়ের সময় চোখে গ্লাস পরে কাজ করা প্রয়োজন।
শিশুদের হাতে ধারালো জিনিসপত্র দেওয়া যাবে না। বিপজ্জনক খেলনা থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। তারপরও একান্তই যদি দিতে হয়, তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো।


