ত্বকের নানা রকম অ্যালার্জি
 February 25, 2022
February 25, 2022
                                        
                                            
                                             6728 Views
6728 Views
                                        
                                        
                                            
                                     
                                        ত্বকের অ্যালার্জির কারণে মৃদু চুলকানি থেকে শুরু করে প্রাণসংহারী অ্যানাফাইলেক্সিস পর্যন্ত হতে পারে। ত্বকের সাধারণ অ্যালার্জিক রোগগুলো হচ্ছে—কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস, একজিমা, আরটিকেরিয়া, অ্যানজিওইডিমা ইত্যাদি।
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস: ধুলাবালু, নিকেলের গয়না, উল বা কৃত্রিম তন্তুর পোশাক, প্রাণীর লোম, কোনো উদ্ভিদ, বিশেষ রাসায়নিকযুক্ত ক্রিম, লোশন, সাবান ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে কারও ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকাতে থাকে, জ্বালা করে, জায়গায় জায়গায় ফুলে যায়। ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে এলে এটি হয় বলে নাম কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। অনেক সময় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া না হয়ে ১২ ঘণ্টা থেকে তিন দিনের মধ্যে হতে পারে।
একজিমা: একজিমা সাধারণত শিশু বয়স থেকেই শুরু হয়। রাসায়নিক, ডিটারজেন্ট, ধুলাবালু বা পশুপাখির মলমূত্রের সংস্পর্শে এলে ত্বক লাল হয়ে যায়, শুষ্ক হয়ে পড়ে, কখনো ফেটে ফেটে যায় এবং চুলকায়।
আরটিকেরিয়া বা হাইভস: সাধারণত কোনো খাবার, ওষুধ বা পোকামাকড়ের কামড় থেকে এই সমস্যা হয়। ত্বকের জায়গায় জায়গায় ফুলে ওঠে, প্রচণ্ড চুলকায়। আরটিকেরিয়ায় ত্বকের ওপরের অংশে প্রদাহ হয়, ত্বকের নিচের রক্তনালি থেকে লিক হয়। তাই লাল হয়ে ফুলে যায়।
অ্যানজিওইডিমা: ত্বকের গভীর অংশে প্রদাহ হলে তাকে বলে অ্যানজিওইডিমা। অনেক সময় আরটিকেরিয়া হিসেবে শুরু হয়ে অ্যানজিওইডিমাতে রূপ নিতে পারে। এটি গুরুতর হতে পারে। ফুলে যেতে পারে চোখ, মুখ।
নির্ণয়
ঠিক কোন অ্যালার্জেন বা খাবার বা বস্তু অ্যালার্জির জন্য দায়ী, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে প্রয়োজন সতর্ক ইতিহাস পর্যালোচনা আর কিছু পরীক্ষা। যেসব দিনে আপনার ত্বকে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে, সেসব দিন আপনি কোন ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে এসেছেন বা কী ধরনের খাবার খেয়েছেন, কোথায় গেছেন বা ত্বকে কী লাগিয়েছেন, তা মনে করুন। একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন। তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।
প্রচলিত পদ্ধতিতে ত্বকে ছিদ্র করে সেখানে নানা ধরনের অ্যালার্জেনের নির্যাস দেওয়া হয় এবং কতক্ষণ পর ওই জায়গায় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। কতটা জায়গা ফুলে গেছে বা লাল হয়ে গেছে, তা পরিমাপ করা হয়।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও অ্যালার্জির নির্দেশক কিছু অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়। নাকের ভেতরের মিউকোসাল বা চোখের লাল ভাবের একটি শারীরিক পরীক্ষা করেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা যেতে পারে।
অ্যালার্জির চিকিৎসা
অ্যালার্জির নানা রকম আধুনিক চিকিৎসা এখন সহজলভ্য। উপসর্গিক চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিহিস্টামিন এবং স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। উপশম পেতে ঠান্ডা সেঁক, ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে রাখা, ক্যালামিন লোশন, গাঢ় ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত নানা মাত্রার স্টেরয়েড ক্রিম দ্রুত উপশম দেয়, তবে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখে খাবার স্টেরয়েডও ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।
প্রতিরোধ
ধুলাবালু এবং অ্যালার্জেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন যার অ্যালার্জির প্রবণতা আছে তিনি ঘর ঝাড়া, বিছানা ঝাড়ার মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন।
বিছানার চাদর এবং বালিশের কভার গরম পানিতে ধোবেন। কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। আসবাব পরিষ্কার করতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন। পশুপাখির লোমে অ্যালার্জি হলে বাড়িতে এগুলো পালা থেকে বিরত থাকুন।
বারবার সাবান, ডিটারজেন্ট, ক্লিনিং এজেন্ট স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। দরকার হলে গৃহস্থালি কাজের সময় গ্লাভস পরুন।
ত্বক শুষ্ক হতে দেবেন না। আর্দ্র রাখবেন।
মনে রাখবেন
ত্বকে চুলকানি ও লাল হওয়ার সঙ্গে যদি চোখের পাতা, মুখ ইত্যাদি ফুলে যায়, জিব ফুলে যায়, কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট হয় বা শ্বাসের সঙ্গে শব্দ হতে থাকে, তবে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
তথ্যসুত্রে: প্রথম আলো



 
                                