আপনার উচ্চ রক্তচাপ বশে রাখতে বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন ও মানসিক চাপ কমান
September 5, 2018
3818 Views
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাইফস্টাইলের ভুমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ও মানসিক চাপ কমিয়ে রাখা এক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখে। কিভাবে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ও মানসিক চাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন আসুন জেনে নিই।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঔষধের পাশাপাশি লাইফস্টাইলের ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ সহ বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ও মানসিক চাপ কমিয়ে রাখা দরকার। ঔষধের পাশাপাশি কিভাবে বাড়ীতে বসে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ও মানসিক চাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন আসুন জেনে নিই।
বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মনিটরের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ
বাড়ীতে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা আপনার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য জটিলতার পুর্বাভাস পেতে সাহায্য করে। যেহেতু আজকাল ডিজিটাল মেশিনে সহজে নিজে নিজে বাসায় সহজেই রক্তচাপ পরীক্ষা করা যায়, তাই বাসায় বসে সবাই নিজের রক্তচাপ মেপে নিতে পারেন। তবে নিজে নিজে রক্তচাপ পরীক্ষা করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের মাধ্যমে চেক করে নিন আপনার পরিমাপ সঠিক হচ্ছে কিনা। আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত পরিদর্শন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত বাড়িতে রক্তচাপ পরীক্ষা করুন এবং আপনার ডাক্তারকে তা জানান। যদি আপনার রক্তচাপ ভালভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন যে কতক্ষণ বা কতদিন পরপর আপনাকে এই রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। অবস্থা ভেদে আপনার ডাক্তার আপনাকে দিনে এক বা একাধিক বার এই রক্তচাপ পরীক্ষার কথা বলতে পারেন। এছাড়া আপনার নিয়মিত রক্তচাপের উঠানামা দেখে তিনি ঔষধের মাত্রা বা সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবেন যা আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপের জন্য অনেকাংশে দায়ী। মানসিক চাপের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার, অ্যালকোহল সেবন বা ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিশাল অবদান রাখতে পারে। তাই কিছুটা সময় নিয়ে দেখে নিন সংসারের বা পারিপার্শ্বিক কোন কাজ,পরিবার, আর্থিক অবস্থা বা অসুস্থতা কোন জিনিসটি বা অবস্থা আপনার দুশ্চিন্তার জন্য দায়ী। সমস্যাটি প্রথমে খুঁজে বের করে তা থেকে মুক্তির সহজ কোন উপায় বের করুন। আপনি যদি আপনার সমস্ত কাজের চাপগুলি দূর করতে নাও পারেন, তাহলে সমস্যাগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করুন। এজন্য নিম্নের চেষ্টাসমূহ করতে পারেন-
১। আপনার প্রত্যাশার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
এজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো আপনি আপনার সারাদিনের সমস্ত কাজগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজান এবং ঐ অনুযায়ী একে একে সমাধান করতে থাকুন। অযথা তাড়াহুড়া না করে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যান। মনে রাখবেন কিছু জিনিস আপনার আয়ত্বের বাহিরে। তাই সেগুলি না হলে বা না করতেপারলে অযথা সেটি নিয়ে বাড়তি টেনশন করবেন না। বিকল্প হিসাবে অন্যদের বুঝিয়ে বলুন যে আপনি কাজটি না করতে না পারলেও কাজটির বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও চেষ্টার কোন ঘাটতি ছিলনা।
২। যে বিষয়গুলি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করুন
কোন কাজ করতে গিয়ে আপনার কাজে সমস্যা হলে সংকোচ ভেঙ্গে আপনার ম্যানেজারের সাথে কথা বলুন এবং সমাধানের চেষ্টা করুন। যদি পরিবারে আপনার বাচ্চাদের বা পত্নীর সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব বা সমস্যা হয়ে যায় কোন বিষয়ে অবিলম্বে সেগুলি সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
৩। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে যান
প্রতিনিয়ত যেসব পারিপার্শ্বিক সমস্যা যেমন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় রাস্তার ট্র্যাফিক সমস্যা হলে একটু সকালেই বাসা থেকে রওয়ানা হওয়া। এছাড়া যারা আপনার মানসিক চাপের কারণ এমন লোকেদের এড়িয়ে চলুন।
৪। যে সমস্ত কাজ আনন্দময় ও উপভোগ্য সেগুলিই নিয়মিত করার চেষ্টা করুন
এজন্য বিভিন্ন আনন্দদায়ক ও মন প্রসন্নকারী কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, সখ করে কিছু রান্নাবান্না করা কিংবা নিজেকে স্বেচ্ছাসেবামুলক বিভিন্ন সামাজিক কাজে যতটুকু সম্ভব জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করা যা অনেক উপকার বয়ে আনতে পারে। এছাড়া কাজের মাঝে মাঝে মানসিক শিথিলতার জন্য কিছু সময়ের জন্য শান্তভাবে বসে থাকতে পারেন এবং গভীরভাবে লম্বা শ্বাস ফেলতে পারেন।
৫। অপরের কাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অনুশীলন করুন
অন্যদের কাজে বেশী বেশী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। এটি মনকে প্রফুল্ল রেখে আপনার অতিরিক্ত রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য করতে পারে।
বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রোগ হিসেবে রুপ নিচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে হার্ট অ্যাটাক সহ স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এমনকি এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে প্রায় প্রতি ১০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ জনেরই এই সমস্যা রয়েছে। তাই খুব শীঘ্রই এর যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া ও প্রতিরোধ করা খুবই জরুরী। তাই অযথা ঔষধপত্র না খেয়ে জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে আসুন আমাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে আনি।


