অপ্রচলিত সিলিয়াক রোগ
September 19, 2020
2117 Views
অনেক সময় ছোটদের বদহজম, খাবার খেলেই ডায়রিয়া বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যার কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে সিলিয়াক ডিজিজের কথা মনে রাখতে হবে।
এটি একটি বিরল জন্মগত সমস্যা, যাতে রোগীর পরিপাকতন্ত্র গ্লুটেনের প্রতি অতিসংবেদনশীল থাকে। এ কারণে গ্লুটেন আছে, এমন খাবার খেলেই শুরু হয় সমস্যা। পেট ফাঁপা, পেটব্যথা, বমি ভাব বা বমি, ডায়রিয়া, দুর্গন্ধযুক্ত মল ইত্যাদি হতে পারে। খাবার ভালো করে হজম না হওয়ার কারণে কিছু ভিটামিন ও খনিজের অভাব দেখা দেয় ক্রমান্বয়ে। এ কারণে রক্তশূন্যতা, ওজন হ্রাস, বাড়ন্ত শিশুর সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া, দাঁত ও হাড়ে সমস্যা, কৈশোর প্রাপ্তিতে দেরি ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দেয়। সিলিয়াক ডিজিজ অনেক সময় বড়দেরও দেখা দিতে পারে। তবে বড়দের হজমের সমস্যার চেয়ে ভিটামিন–স্বল্পতার জন্য জটিলতাই বেশি দেখা যায়। ফলে রক্তশূন্যতা, হাড় ক্ষয়, জয়েন্ট ব্যথা, স্নায়ুর সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি হয়।
গ্লুটেন কী?
গ্লুটেন হলো একধরনের প্রোটিন, যা গম, বার্লি, যব, রাই ইত্যাদি শস্যদানায় থাকে। এই গ্লুটেনের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে পরিপাকতন্ত্রের সূক্ষ্ম চুলের মতো ভিলাইগুলো নষ্ট হতে থাকে। খাবার হজমের জন্য এই ভিলাইগুলো দরকার। ফলে ক্রমেই হজমের সমস্যা তীব্র হয়ে উঠতে থাকে। যাদের পরিবারে অন্য সদস্যদের গ্লুটেন অ্যালার্জি আছে, যেসব শিশুর টাইপ ১ ডায়াবেটিস, অটোইমিউন থাইরয়েড সমস্যা, অ্যাড্রিনাল বা বৃক্কীয় গ্রন্থির সমস্যা আছে, ডাউন সিনড্রোমের শিশু—এদের সিলিয়াক ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
কীভাবে বুঝবেন?
শিশু বড় হতে হতে নানা ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। যদি বিশেষ কিছু খাবার খেলেই তাদের ডায়রিয়া, পেটব্যথা, পেট ফাঁপা, বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে সতর্ক হোন। গমের তৈরি রুটি, পাউরুটি, কেক বা বার্লিজাতীয় খাবারে সমস্যা হচ্ছে কি না, দেখতে হবে। ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, হাড়ের দুর্বলতা, বৃদ্ধিজনিত সমস্যা, স্নায়ুর সমস্যা, দুধজাতীয় খাবারেও অ্যালার্জি দেখা দেয়। রক্তে কিছু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে রোগটি শনাক্ত করা যায়।
কী করবেন?
সিলিয়াক ডিজিজের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল গ্লুটেন আছে, এমন সব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে রুটি, পরোটা, নান, পাউরুটি, কেক, বেকারির খাবার, পাস্তা, নুডলস, সিরিয়াল ইত্যাদি। যেসব খাবার খেতে পারবে, তা হলো চাল, আলু, মাছ, মাংস, ফলমূল, সবজি, বাদাম, কর্ন বা ভুট্টার তৈরি খাবার, দুধ। তবে এর সঙ্গে দুধে অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এবং ডিমে অ্যালার্জি থাকাও বিচিত্র নয়। খাবারে সাবধানী হওয়ার সঙ্গে যেসব ভিটামিন ও খনিজের স্বল্পতা আছে, সেগুলো সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। সিলিয়াক ডিজিজ ভালো হয় না কিন্তু এর সঙ্গে জীবনাচারকে মানিয়ে চলতে হয়। অনেক দেশে গ্লুটেন ফ্রি আটা, ময়দা, বিস্কুট, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি খাবার পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে এগুলো সহজলভ্য নয়। পাওয়া গেলেও ব্যয়বহুল।


