হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
 November 21, 2020
November 21, 2020
                                        
                                            
                                             4865 Views
4865 Views
                                        
                                        
                                            
                                    হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সম্পর্কে প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন নিউরো সার্জারি বিশেষজ্ঞ, ডা. নজরুল হোসেন।
রক্তনালির বাইরের দিকে বুদ্বুদ বা বেলুনের মতো ফুলে ওঠাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যানিউরিজম। রক্তনালির নির্দিষ্ট কোনো জায়গার অস্বাভাবিকতা বা দুর্বলতার জন্য ওই জায়গা এভাবে ফুলে ওঠে।
অ্যানিউরিজম তিন ধরনের—মহাধমনির অ্যানিউরিজম, মস্তিষ্কের রক্তনালির অ্যানিউরিজম আর হৃদ্যন্ত্রের নিলয়ে হওয়া কোনো অ্যানিউরিজম। এ ছাড়া শরীরের যেকোনো জায়গার রক্তনালিতে অ্যানিউরিজম হতে পারে। যেমন কুঁচকি বা হাঁটুর পেছনে, বগলের নিচে বা ঘাড়ের রক্তনালিতে। এটি নাটাই আকৃতির হতে পারে, আবার থলের মতো হতে পারে।
মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম হঠাৎ মহাবিপদ হিসেবে হাজির হয়। হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, সঙ্গে বমি বা বমি বমি ভাব, ঘাড়ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা দুটো দেখা, চোখ ব্যথা, খিঁচুনি থেকে শুরু করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হতে পারে লক্ষণ।
কাদের হয় অ্যানিউরিজম? কিছু ঝুঁকির কথা জানা যাক। বয়স বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, তামাক সেবন ও মদ্যপান, স্থূলতা, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, মাথায় আঘাত, সংক্রমণ ইত্যাদি ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া বংশগত প্রভাবও রয়েছে।
অ্যানিউরিজম বা রক্তনালির এই ফোলা অংশ খুবই নাজুক আর সহজেই ফেটে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে। তাই বেশির ভাগ রোগীই মস্তিষ্কে রক্তপাত বা ব্রেন হেমারেজ নিয়ে শনাক্ত হন। মাথার সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্তপাতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। আর মাথার সিটি এনজিওগ্রামের দ্বারা অ্যানিউরিজমের উপস্থিতি এবং উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা কী? সাধারণ চিকিৎসা হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তে লবণের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা, কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। কিন্তু মূল চিকিৎসাপদ্ধতি হলো শল্যচিকিৎসা।
এটি দুভাবে করা সম্ভব—ক্লিপিং আর কয়েলিং। ক্লিপিং পদ্ধতিতে রক্তনালির ফোলা অংশটির মুখে ক্লিপের মতো আটকে দিয়ে রক্তপাত ঠেকানো হয়। আর কয়েলিং পদ্ধতিতে একটি প্যাঁচানো কয়েল অ্যানিউরিজমের ভেতর সেট করে দেওয়া হয়, যা রক্তনালির মাধ্যমে রক্তপাত আটকায়। দুটোই উচ্চপ্রযুক্তি সহায়তায় করা হয়ে থাকে আর বাংলাদেশে করা সম্ভব।
অ্যানিউরিজম ঠেকাতে করণীয়
· উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
· রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন।
· আদর্শ ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
· যাঁদের বংশে এ ধরনের রোগ আছে, তাঁরা কম বয়স থেকেই সতর্ক ও সচেতনভাবে জীবন যাপন করুন।
· হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, বমি বা বমি বমি ভাব, খিঁচুনি হলে বা মাথাব্যথার পর হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়লে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের নিউরোকেয়ার বিভাগে যোগাযোগ করুন। যত দ্রুত এর চিকিৎসা করা যায়, ততই ভালো। অনেক বেশি রক্তপাত হয়ে গেলে সেরে ওঠার সম্ভাবনা কম।



 
                                