daktar-e daktar-e
  • Log In
  • Health Directory  
    • Hospital
    • Ambulance
    • Blood Bank
    • Pharmacy
    • Healthy Living Outlet
  • Health Record
  • Cash Claim
  • Get Discount
  • Other Services  
    • Hospital Discount
    • Health Insurance
    • Claim Insurance
স্বাস্থ্য পরামর্শ

শ্বাস–প্রশ্বাসে যেভাবে ছড়ায় করোনাভাইরাস

July 23, 2021 7201 Views Share on |

শ্বাস–প্রশ্বাসে যেভাবে ছড়ায় করোনাভাইরাস- সে সম্পর্কে প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, এমনকি পরস্পর কথা বলা, হাসাহাসি, বক্তৃতা, গান গাওয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় আমাদের নাক-মুখ থেকে পানি ও শ্লেষ্মা নিঃসৃত যে বাতাস বের হয়, তার নাম রেসপিরেটরি পারটিকেল। এর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ঘটে।

করোনাভাইরাস রেসপিরেটরি ড্রপলেট অথবা রেসপিরেটরি নিউক্লিয়াই আকারে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বের হয়ে আসে। রেসপিরেটরি পারটিকেলের আকার ১ থেকে ২ হাজার মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। এই রেসপিরেটরি পারটিকেল দুই ধরনের—

১. রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই

আকার ১ থেকে ৫ মিক্রোমিটার। অর্থাৎ এক সেন্টিমিটারের ১০ হাজার ভাগ থেকে ২ হাজার ভাগ আকারের রেসপিরেটরি পারটিকেল, যা কেবল শীতকালে কথা বলার সময় বিশেষ করে রৌদ্রালোকে খালি চোখে আমরা ধোঁয়ার মতো দেখতে পারি।

রেসপিরেটরি অ্যারোসলের মাধ্যমে সংক্রমণ হলে তাকে এয়ারবর্ন সংক্রমণ বলে। এই প্রক্রিয়ায় করোনার সংক্রমণ ঘটে মাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। বাকি ৯৯ শতাংশ সংক্রমণ ঘটে ইনফেকটেড হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখে স্পর্শ করা ও রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে।

২. রেসপিরেটরি ড্রপলেট

আকার ৫ থেকে ২ হাজার মাইক্রোমিটার। অর্থাৎ এক সেন্টিমিটারের ২ হাজার ভাগ থেকে ৫ ভাগ আকারের রেসপিরেটরি পারটিকেল, যা হাঁচি, কাশি, বক্তৃতা, গান ও জোরে কথা বলার সময়ে বেরিয়ে আসে।

রেসপিরেটরি ড্রপলেটগুলো বাতাসের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিন ভাগ হয়ে যায়।

একটা অংশ ড্রপলেট আকারে সঙ্গে সঙ্গেই এক মিটারের মধ্যেই মাটিতে পড়ে যায়। একটা অংশ রেসপিরেটরি ড্রপলেট ভেঙে আরও ছোট রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াইতে রূপ নেয় এবং বাতাসে প্রবাহ ভালো থাকলে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। উপরোক্ত দুই রকমই বিশেষ করে রেসপিরেটরি ড্রপলেট জামাকাপড়, চেয়ার–টেবিলে পড়ে লেগে যায় এবং অন্যদের সংস্পর্শে এসে সহজেই সংক্রমিত করে।

স্থির আবহাওয়া বা বাতাসে এই সব ড্রপলেট খুব দ্রুতই মাটিতে পড়ে যায়। তবে রেসপিরেটরি অ্যারোসল খানিকটা স্থির বাতাসেও বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ভেসে বেড়ায় এবং সংক্রমণ ঘটায়। কিন্তু প্রবহমান বাতাসে রেসপিরেটরি অ্যারোসল অনেক দূর পর্যন্ত গেলেও এই প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। একে তো ভাইরাসের পরিমাণ কম, আবার অন্যদিকে চলতে চলতে বাতাসে ডাইলিউট হয়ে যায়।

এখন এই রেসপিরেটরি কণায় সবারই করোনাভাইরাসের দ্বারা সংক্রমণ হবে কি না, তা নির্ভর করে—

১) ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা এবং এর রোগগ্রস্ত করার ক্ষমতার ওপর

২) যাকে আক্রমণ করবে, তার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, বয়স ও কো-মরবিডিটির ওপর

৩) ইনফেক্সাস ডোজের ওপর

৪) কতক্ষণ ব্যক্তি ভাইরাস রোগীর কাছে ছিল তার ওপর

৫) উৎস ও রোগীর মাঝে দূরত্বের ওপর

৬) রোগজীবাণু–আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে বাইরে বের হওয়ার কতক্ষণ পর কোন পরিবেশে সংক্রমণ করেছে তার ওপর

রেসপিরেটরি ড্রপলেট কত বেগে মানুষের নাক-মুখ থেকে বের হয় এবং আপনি তার থেকে কত দূরে কতক্ষণ থাকলে ইনফেকটেড হবেন, তার হিসাবও আছে।

সাধারণ কথোপকথনের সময়ে

সাধারণ অবস্থায়, ১০০০ মাইক্রোমিটার সাইজের একটি রেসপিরেটরি৷ ড্রপলেট ০ দশমিক ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ১ মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

১০০ মাইক্রোমিটার আকারের একটি ড্রপলেট ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ১ মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

১০ মাইক্রোমিটার আকারের একটি ড্রপলেট ৫ মিনিটের মধ্যে ১ মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

১ মাইক্রোমিটার সাইজের রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই ৫০ থেকে ৩০০ মিনিটের মধ্যে ১ মিটার কিংবা আরও দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

অনেকটা স্থির বাতাসে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বের হওয়ার গতিবেগ নিম্নরূপ:

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ১ মিটার/সেকেন্ড।

কথাবার্তা বলার সময়ে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ৫ মিটার/সেকেন্ড।

জোরে কাশিতে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ১০ মিটার/সেকেন্ড, ৫০ থেকে ১০০ মাইল/ঘণ্টা।

জোরে হাঁচিতে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ২০ থেকে ৫০ মিটার/সেকেন্ড, ২০০ মেইল/ঘণ্টা।

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ৫০ থেকে ১০০ রেসপিরেটরি ড্রপলেট বের হয় এবং ইনফেকটেড ব্যক্তি প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে ২০ থেকে ৩০ ভাইরাস বের হয়।

কথাবার্তা বলার সময় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের চেয়ে ১০ গুণ বেশি রেসপিরেটরি ড্রপলেট বের হয়।

ড্রপলেট নিউক্লিয়াই বা অ্যারোসল এবং রেসপিরেটরি ড্রপলেট থেকে সংক্রমণকে সরাসরি সংক্রমণ বলে। আর ইনফেকটেড ফোমাইটসে স্পর্শ করার ফলে তা নাক, মুখ, চোখ দিয়ে ঢুকলে তাকে সরাসরি সংক্রমণ বলে।

কতগুলো ভাইরাস প্রবেশ করলে সংক্রমিত হওয়া আশঙ্কা থাকে, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় কিছুটা ভিন্নতা দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ৫০ থেকে ১০০০ করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে সংক্রমিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হচ্ছে ন্যাসোফ্যারিক্স, যেখানে ২ দশমিক ৫ থেকে ১৯ মাইক্রোমিটার আকারের রেসপিরেটরি ড্রপলেট আটকা পড়ে। এই ন্যাসোফ্যারিক্স থাকে নাকের পেছনে, ভোকাল কর্ডের ওপরে। তাদের গবেষণায় থ্রেসোল্ড ইনফেক্সাস ডোজ হলো: ৩০০ ভাইরাস পারটিকেল। অথচ ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপের ইনফেক্সাস ডোজ হলো: ১ হাজার ৯৫০ থেকে ৩ হাজারটি ভাইরাস।

বিজ্ঞানীরা এটাও নিশ্চিত যে করোনাভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমেই ছড়ায়।

একটা ড্রপলেটে শত শত হাজার হাজার করোনাভাইরাসের পারটিকেল থাকতে পারে।

গবেষণায় দেখ গেছে, একটা কাশিতে ৩০ হাজার এবং একটা হাঁচিতে ৪০ হাজার পর্যন্ত রেসপিরেটরি ড্রপলেট থাকতে পারে। যারা সুপার স্প্রেডার মারাত্মকভাবে আক্রান্ত, তাদের বড় একটা হাঁচিতে ২০ কোটি ভাইরাস বের হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা

১। যত বেশি ভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ, যত বেশি বয়স, যত দুর্বল রোগ প্রতিরোধী, তত মারাত্মক সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা।

২। ভাইরাস যদি বিভিন্ন ধরনে রূপ নেয় যে সর্বাবস্থায় প্রতিকুল পরিবেশে, গ্রীষ্ম বা শীতে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।

৩। গ্রীষ্মকালে ২০ থেকে ৪০ বয়সীদের আক্রান্তের হার বেশি, শীতকালে বয়স্কদের আক্রান্তের হার বেশি।

৪। মাস্ক ড্রপলেট ইনফেকশন (৫ থেকে ২ হাজার মাইক্রোমিটার সাইজ) প্রতিরোধে কার্যকর। কিন্তু রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই (১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার সাইজ) প্রতিরোধে কম কার্যকর নয়।

কারণ, সার্জিক্যাল মাস্কের ছিদ্র ৩০০ ন্যানোমিটার আর করোনাভাইরাসের সাইজ ৩০ থেকে ১২০ নয়ানোমিটার। ফলে রেসপিরেটরি নিইউক্লিয়াইয়ের সাইজ যদি ৩০০ ন্যানোমিটারের চেয়ে বড় হয়, তবে তা মাস্কে আটকা পড়বে। ভাইরাস কিন্তু যখন বাতাসে ঘুরে বেড়ায়, তখন ড্রপলেট নিউক্লিয়াইয়ের আশ্রয়েই বাতাসে ভেসে বেড়ায়, একাকী থাকে না। তবে এন৯৫ মাস্ক বা ডাবল সার্জিক্যাল মাস্ক ৯৫ শতাংশ কার্যকর। এটাও জেনে রাখা জরুরি, সার্জিক্যাল মাস্ক অন্যকে রেসপিরেটরি ড্রপলেট থেকে বাঁচায়, কিন্তু নিজে খুব একটা সুরক্ষা পায় না। এমতাবস্থায় এন৯৫ মাস্ক বেশি কার্যকর, যা নিজেকে অন্যদের থেকে রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিইউক্লিয়াই থেকেও সুরক্ষা দেবে।

৫। বদ্ধ ঘর, বদ্ধ করিডর, এক রুমে গাদাগাদি বসবাস, ফ্যান ছাড়া গরমে হাঁসফাঁস, স্পিলিট এসি রুম, বদ্ধ পরিবেশ, স্থির বাতাস, লোকসমাগম, বাজার, মিছিল-সভা ও বন্ধ দরজা–জানালা করোনা সংক্রমণের বড় কারখানা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব হিস্টোপ্যাথলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, এমনকি পরস্পর কথা বলা, হাসাহাসি, বক্তৃতা, গান গাওয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় আমাদের নাক-মুখ থেকে পানি ও শ্লেষ্মা নিঃসৃত যে বাতাস বের হয়, তার নাম রেসপিরেটরি পারটিকেল। এর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ঘটে।

করোনাভাইরাস রেসপিরেটরি ড্রপলেট অথবা রেসপিরেটরি নিউক্লিয়াই আকারে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বের হয়ে আসে। রেসপিরেটরি পারটিকেলের আকার ১ থেকে ২ হাজার মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। এই রেসপিরেটরি পারটিকেল দুই ধরনের—

১. রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই

আকার ১ থেকে ৫ মিক্রোমিটার। অর্থাৎ এক সেন্টিমিটারের ১০ হাজার ভাগ থেকে ২ হাজার ভাগ আকারের রেসপিরেটরি পারটিকেল, যা কেবল শীতকালে কথা বলার সময় বিশেষ করে রৌদ্রালোকে খালি চোখে আমরা ধোঁয়ার মতো দেখতে পারি।

রেসপিরেটরি অ্যারোসলের মাধ্যমে সংক্রমণ হলে তাকে এয়ারবর্ন সংক্রমণ বলে। এই প্রক্রিয়ায় করোনার সংক্রমণ ঘটে মাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। বাকি ৯৯ শতাংশ সংক্রমণ ঘটে ইনফেকটেড হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখে স্পর্শ করা ও রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে।

২. রেসপিরেটরি ড্রপলেট

আকার ৫ থেকে ২ হাজার মাইক্রোমিটার। অর্থাৎ এক সেন্টিমিটারের ২ হাজার ভাগ থেকে ৫ ভাগ আকারের রেসপিরেটরি পারটিকেল, যা হাঁচি, কাশি, বক্তৃতা, গান ও জোরে কথা বলার সময়ে বেরিয়ে আসে।

রেসপিরেটরি ড্রপলেটগুলো বাতাসের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিন ভাগ হয়ে যায়।

একটা অংশ ড্রপলেট আকারে সঙ্গে সঙ্গেই এক মিটারের মধ্যেই মাটিতে পড়ে যায়। একটা অংশ রেসপিরেটরি ড্রপলেট ভেঙে আরও ছোট রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াইতে রূপ নেয় এবং বাতাসে প্রবাহ ভালো থাকলে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। উপরোক্ত দুই রকমই বিশেষ করে রেসপিরেটরি ড্রপলেট জামাকাপড়, চেয়ার–টেবিলে পড়ে লেগে যায় এবং অন্যদের সংস্পর্শে এসে সহজেই সংক্রমিত করে।

স্থির আবহাওয়া বা বাতাসে এই সব ড্রপলেট খুব দ্রুতই মাটিতে পড়ে যায়। তবে রেসপিরেটরি অ্যারোসল খানিকটা স্থির বাতাসেও বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ভেসে বেড়ায় এবং সংক্রমণ ঘটায়। কিন্তু প্রবহমান বাতাসে রেসপিরেটরি অ্যারোসল অনেক দূর পর্যন্ত গেলেও এই প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। একে তো ভাইরাসের পরিমাণ কম, আবার অন্যদিকে চলতে চলতে বাতাসে ডাইলিউট হয়ে যায়।

এখন এই রেসপিরেটরি কণায় সবারই করোনাভাইরাসের দ্বারা সংক্রমণ হবে কি না, তা নির্ভর করে—

১) ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা এবং এর রোগগ্রস্ত করার ক্ষমতার ওপর

২) যাকে আক্রমণ করবে, তার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, বয়স ও কো-মরবিডিটির ওপর

৩) ইনফেক্সাস ডোজের ওপর

৪) কতক্ষণ ব্যক্তি ভাইরাস রোগীর কাছে ছিল তার ওপর

৫) উৎস ও রোগীর মাঝে দূরত্বের ওপর

৬) রোগজীবাণু–আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে বাইরে বের হওয়ার কতক্ষণ পর কোন পরিবেশে সংক্রমণ করেছে তার ওপর

রেসপিরেটরি ড্রপলেট কত বেগে মানুষের নাক-মুখ থেকে বের হয় এবং আপনি তার থেকে কত দূরে কতক্ষণ থাকলে ইনফেকটেড হবেন, তার হিসাবও আছে।

সাধারণ কথোপকথনের সময়ে

সাধারণ অবস্থায়, ১০০০ মাইক্রোমিটার সাইজের একটি রেসপিরেটরি৷ ড্রপলেট ০ দশমিক ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ১ মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

১০০ মাইক্রোমিটার আকারের একটি ড্রপলেট ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ১ মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

১০ মাইক্রোমিটার আকারের একটি ড্রপলেট ৫ মিনিটের মধ্যে ১ মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

১ মাইক্রোমিটার সাইজের রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই ৫০ থেকে ৩০০ মিনিটের মধ্যে ১ মিটার কিংবা আরও দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে।

অনেকটা স্থির বাতাসে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বের হওয়ার গতিবেগ নিম্নরূপ:

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ১ মিটার/সেকেন্ড।

কথাবার্তা বলার সময়ে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ৫ মিটার/সেকেন্ড।

জোরে কাশিতে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ১০ মিটার/সেকেন্ড, ৫০ থেকে ১০০ মাইল/ঘণ্টা।

জোরে হাঁচিতে বাতাস বের হওয়ার গতিবেগ থাকে ২০ থেকে ৫০ মিটার/সেকেন্ড, ২০০ মেইল/ঘণ্টা।

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ৫০ থেকে ১০০ রেসপিরেটরি ড্রপলেট বের হয় এবং ইনফেকটেড ব্যক্তি প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে ২০ থেকে ৩০ ভাইরাস বের হয়।

কথাবার্তা বলার সময় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের চেয়ে ১০ গুণ বেশি রেসপিরেটরি ড্রপলেট বের হয়।

ড্রপলেট নিউক্লিয়াই বা অ্যারোসল এবং রেসপিরেটরি ড্রপলেট থেকে সংক্রমণকে সরাসরি সংক্রমণ বলে। আর ইনফেকটেড ফোমাইটসে স্পর্শ করার ফলে তা নাক, মুখ, চোখ দিয়ে ঢুকলে তাকে সরাসরি সংক্রমণ বলে।

কতগুলো ভাইরাস প্রবেশ করলে সংক্রমিত হওয়া আশঙ্কা থাকে, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় কিছুটা ভিন্নতা দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ৫০ থেকে ১০০০ করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে সংক্রমিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হচ্ছে ন্যাসোফ্যারিক্স, যেখানে ২ দশমিক ৫ থেকে ১৯ মাইক্রোমিটার আকারের রেসপিরেটরি ড্রপলেট আটকা পড়ে। এই ন্যাসোফ্যারিক্স থাকে নাকের পেছনে, ভোকাল কর্ডের ওপরে। তাদের গবেষণায় থ্রেসোল্ড ইনফেক্সাস ডোজ হলো: ৩০০ ভাইরাস পারটিকেল। অথচ ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপের ইনফেক্সাস ডোজ হলো: ১ হাজার ৯৫০ থেকে ৩ হাজারটি ভাইরাস।

বিজ্ঞানীরা এটাও নিশ্চিত যে করোনাভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমেই ছড়ায়।

একটা ড্রপলেটে শত শত হাজার হাজার করোনাভাইরাসের পারটিকেল থাকতে পারে।

গবেষণায় দেখ গেছে, একটা কাশিতে ৩০ হাজার এবং একটা হাঁচিতে ৪০ হাজার পর্যন্ত রেসপিরেটরি ড্রপলেট থাকতে পারে। যারা সুপার স্প্রেডার মারাত্মকভাবে আক্রান্ত, তাদের বড় একটা হাঁচিতে ২০ কোটি ভাইরাস বের হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা

১। যত বেশি ভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ, যত বেশি বয়স, যত দুর্বল রোগ প্রতিরোধী, তত মারাত্মক সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা।

২। ভাইরাস যদি বিভিন্ন ধরনে রূপ নেয় যে সর্বাবস্থায় প্রতিকুল পরিবেশে, গ্রীষ্ম বা শীতে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।

৩। গ্রীষ্মকালে ২০ থেকে ৪০ বয়সীদের আক্রান্তের হার বেশি, শীতকালে বয়স্কদের আক্রান্তের হার বেশি।

৪। মাস্ক ড্রপলেট ইনফেকশন (৫ থেকে ২ হাজার মাইক্রোমিটার সাইজ) প্রতিরোধে কার্যকর। কিন্তু রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই (১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার সাইজ) প্রতিরোধে কম কার্যকর নয়।

কারণ, সার্জিক্যাল মাস্কের ছিদ্র ৩০০ ন্যানোমিটার আর করোনাভাইরাসের সাইজ ৩০ থেকে ১২০ নয়ানোমিটার। ফলে রেসপিরেটরি নিইউক্লিয়াইয়ের সাইজ যদি ৩০০ ন্যানোমিটারের চেয়ে বড় হয়, তবে তা মাস্কে আটকা পড়বে। ভাইরাস কিন্তু যখন বাতাসে ঘুরে বেড়ায়, তখন ড্রপলেট নিউক্লিয়াইয়ের আশ্রয়েই বাতাসে ভেসে বেড়ায়, একাকী থাকে না। তবে এন৯৫ মাস্ক বা ডাবল সার্জিক্যাল মাস্ক ৯৫ শতাংশ কার্যকর। এটাও জেনে রাখা জরুরি, সার্জিক্যাল মাস্ক অন্যকে রেসপিরেটরি ড্রপলেট থেকে বাঁচায়, কিন্তু নিজে খুব একটা সুরক্ষা পায় না। এমতাবস্থায় এন৯৫ মাস্ক বেশি কার্যকর, যা নিজেকে অন্যদের থেকে রেসপিরেটরি অ্যারোসল বা ড্রপলেট নিইউক্লিয়াই থেকেও সুরক্ষা দেবে।

৫। বদ্ধ ঘর, বদ্ধ করিডর, এক রুমে গাদাগাদি বসবাস, ফ্যান ছাড়া গরমে হাঁসফাঁস, স্পিলিট এসি রুম, বদ্ধ পরিবেশ, স্থির বাতাস, লোকসমাগম, বাজার, মিছিল-সভা ও বন্ধ দরজা–জানালা করোনা সংক্রমণের বড় কারখানা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব হিস্টোপ্যাথলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।


  • শেয়ার করুন:

Related Articles

subject

সাইনুসাইটিস সমস্যাঃ সুস্থ থাকতে যা জানতে হবে

স্বাস্থ্য পরামর্শ January 3, 2018

সাইনুসাইটিস অনেকের মাঝে অতি পরিচিত একটি সমস্যা। মুখমন্ডল ও মস্তিস্কের হাড়কে হাল্কা রাখার সুবিধার্তে মাথার খুলির চারিদিকে কিছু বায়ুকুঠুরি আছে যার নাম...

subject

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: এক মহাবিপর্যয়ের হাতছানি

স্বাস্থ্য পরামর্শ January 18, 2018

মা, পেট খারাপ- সিপ্রোসিন খা, পেটে জানি কেমুন করে- দুইটা মেট্রোনিডাজল খা। সবাই যেন ছোটখাটো ডাক্তার। সবচেয়ে বড় ডাক্তার ওষুধের দোকানের কমপাউন্ডার গুলো। এভাবে...

Popular Post
  • টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

    July 9, 2018
  • গলা ব্যথার বিভিন্ন উপসর্গ ও করণীয়

    January 10, 2019
  • হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কতিপয় কারণ ও আমাদের করণীয়

    November 25, 2018
  • গলা ও বুক জ্বালা-পোড়ার বিভিন্ন কারণ ও করণীয়

    June 25, 2018
  • মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ, লক্ষণ ও প্রতিকার

    September 6, 2018
Subscribe to our newsletter
Categories
  • স্বাস্থ্য পরামর্শ
  • খাদ্য ও পুষ্টি
  • নারী স্বাস্থ্য
  • শিশুর যত্ন
  • ফিটনেস
  • সৌন্দর্য্য চর্চা
Download App
Services

  • Doorstep Pathology Test
  • Services
  • Ask a Doctor
  • Doctor Appointment
  • Discount
  • Cash Claim
  • Health Record
  • Health Directory
Useful Links

  • About Us
  • Contact Us
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
Social

Our Payment Partners

All Debit, Credit, and Prepaid Cards

logo
© 2025 All Rights Reserved by Healthcare Information System Ltd.
Back to top